তাওহিদ (التَّوْحِيدُ) (পাঠ ১)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK
201

তাওহিদের ধারণা
তাওহিদ ( تَوْحِيدٌ )আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় একে বলা হয় একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করাকে তাওহিদ বা একত্ববাদ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। তিনিই হলেন একমাত্র ইলাহ। তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাসই হলো তাওহিদ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدُ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

অর্থ: বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন (সকলেই তার মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১-৪)

আল্লাহ তায়ালার পরিচয়
আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি সত্তাগতভাবে যেমনি একক, তেমনি গুণাবলিতেও তুলনাহীন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ একক সত্তা। তার কোনো সমকক্ষ নেই। তিনি কারো সন্তান নন। আবার কেউ তার সন্তানও নয়। গুণাবলির দিক থেকেও মহান আল্লাহ অদ্বিতীয়। তিনি সকল গুণের আধার। তিনি চিরস্থায়ী, চিরঞ্জীব, শাশ্বত ও সত্য। তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, পুরস্কারদাতা, শাস্তিদাতা ইত্যাদি। তিনি 'লা-শারিক'। তার সমান বা সমকক্ষ কেউ নেই। তার গুণাবলির সাথে কোনো কিছুরই তুলনা করা যায় না। তার তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই।

তাওহিদের তাৎপর্য
আমরা আমাদের চারপাশে নানারকম জিনিস দেখতে পাই। সুন্দর সুন্দর ফুল, ফল, গাছপালা, তরুলতা, পশুপাখি ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে নদীনালা, পাহাড়, পর্বত, বন, জঙ্গল, সাগর, মহাসাগর। আরও আছে বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি। আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না এমন অনেক বস্তু এবং প্রাণীও রয়েছে। এসব কিছুই সৃষ্টিজগতের অন্তর্গত। এগুলো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নিজ থেকে সৃষ্ট হয়নি। নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা এগুলো সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তার কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়নি। তিনি 'হও' (কুন) বলার সাথে সাথেই সবকিছু সৃষ্টি হয়ে যায়।
বিশ্বজগতের সবকিছুই তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি প্রয়োগ করে এগুলো থেকে উপকার লাভ করে। সুতরাং মানুষের উচিত তার স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এক আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য ও ইবাদত করা। তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না। এভাবে মহান আল্লাহর তাওহিদ বা একত্ববাদের প্রতি অনুগত হলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে কল্যাণ ও সফলতা লাভ করতে পারে।
তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব
তাওহিদ বা আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস আকাইদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইমান ও ইসলামের মূলভিত্তি হলো তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। সকল নবি-রাসুল (আ.) তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। সকলেই ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তার তুল্য কিছুই নেই। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করে। আর তাওহিদে বিশ্বাসীগণ আখিরাতে জান্নাত লাভ করবেন।

তাওহিদে বিশ্বাসের উদাহরণ
আমরা সকলেই হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর নাম শুনেছি। তিনি ছিলেন একজন নবি ও রাসুল। তিনি এক মূর্তিপূজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মন্দিরের পুরোহিত। তাঁর সময়ের লোকজন আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বা তাওহিদে বিশ্বাস করত না। বরং তারা মূর্তিপূজা করত। তাদের রাজা নমরূদের উপাসনা করত। হযরত ইবরাহিম (আ.) এসব করতেন না। তিনি ভাবলেন মূর্তি বা নমরূদ কোনো কিছুর স্রষ্টা হতে পারে না। কেননা এগুলো নিজেরাই ধ্বংসশীল। সুতরাং এদের উপাসনা করা ঠিক নয়।
এভাবে তিনি স্রষ্টা সম্পর্কে চিন্তা করতে লাগলেন। প্রথমে তিনি ভাবলেন যে আকাশের তারকা, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি হয়তো মানুষের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু এগুলো একে একে অদৃশ্য হয়ে গেলে তিনি বুঝতে পারলেন যে এগুলো মানুষের স্রষ্টা বা ইলাহ নয়। কেননা এগুলো কোনোটাই স্থায়ী নয়। এরা অস্ত যায়, অদৃশ্য হয়। বরং এ সবকিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন তিনিই ইলাহ, তিনিই মাবুদ। অতঃপর তিনি সেই অদৃশ্য সত্তার প্রতি ইমান আনলেন ও তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপন করলেন। এভাবে বিশ্বজগতের নানা সৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করে হযরত ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান করলেন।
অতএব, তাওহিদ অর্থ একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালা তার সত্তা ও গুণাবলিতে এক ও অদ্বিতীয়। আমরা তাওহিদে বিশ্বাস করব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। আল্লাহ তায়ালার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করব না।
তাওহিদের শিক্ষা
আকাইদের সর্বপ্রথম ও প্রধান বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদ অর্থ আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা, তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তাওহিদ থেকে আমরা নিম্নলিখিত শিক্ষা লাভ করতে পারি:

১. আমরা আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করবো এবং তার সাথে কাউকে শরিক করবো না।
২. আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করবো, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদাত করবো না।
৩. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীর সবকিছু তিনি আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য আমরা সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো।
৪. আল্লাহ তায়ালা বিপদ-আপদ থেকে একমাত্র মুক্তিদাতা। সুতরাং বিপদ-আপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা সবসময় আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবো।
৫. আমরা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জানবো ও সেইসব নামে তাকে ডাকব এবং আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়ার চেষ্টা করবো।
৬. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবসময় দেখছেন এবং আমাদের সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং আমরা সর্বদা ভালো কাজ করবো এবং অন্যায়, অত্যাচার ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ থেকে দূরে থাকব।

কাজ: শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল তাওহিদের পরিচয় ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলবে। অন্যদল একটি উদাহরণের মাধ্যমে তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বলবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...